জীবন বিনিময় কাবিতা
"বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর-" এই লাইনটির প্রতিটি শব্দের অর্থ নিচে দেওয়া হলো:
|
শব্দ |
আধুনিক বা প্রচলিত অর্থ |
কবিতার প্রেক্ষাপটে অর্থ |
|
বাদশা |
রাজা, সম্রাট, শাসক |
সম্রাট বাবর। |
|
বাবর |
প্রথম মুঘল সম্রাট জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবর (ব্যক্তি নাম)। |
প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর। |
|
কাঁদিয়া |
ক্রন্দন করে, কান্নাকাটি করে। |
চোখের জল ফেলে, অত্যন্ত
দুঃখে। |
|
ফিরিছে |
ঘুরছে, পায়চারি করছে, ঘোরাফেরা করছে। |
অস্থিরভাবে ঘুরছেন, স্থির থাকতে পারছেন না। |
|
নিদ |
ঘুম, নিদ্রা। |
চোখে ঘুম বা বিশ্রাম। |
|
নাহি |
নেই, নাই। |
অনুপস্থিত। |
|
চোখে |
দৃষ্টি অঙ্গে, নয়নে। |
তাঁর নয়নে, তাঁর দৃষ্টিতে। |
|
তাঁর |
তাঁর (সম্মানসূচক), রাজার। |
বাবর-এর। |
"পুত্র তাঁহার হুনায়ন বুঝি বাঁচে না এবার আর!
চারিধারে তার ঘনায়ে আসিছে মরন-অন্ধকার।"—
এই লাইন দুটির প্রতিটি শব্দের অর্থ নিচে দেওয়া হলো:
|
শব্দ |
আধুনিক বা প্রচলিত অর্থ |
কবিতার প্রেক্ষাপটে অর্থ |
|
পুত্র |
ছেলে, সন্তান। |
বাবরের ছেলে, অর্থাৎ হুমায়ুন। |
|
তাঁহার |
তাঁর (সম্মানসূচক)। |
বাবরের। |
|
হুনায়ন |
মুঘল সম্রাট হুমায়ুন (বাবরের পুত্র)। |
সম্রাট হুমায়ুন (অসুস্থ রাজপুত্র)। |
|
বুঝি |
মনে হয়, হয়তো, সম্ভবত। |
বাবর সন্দেহ করছেন, অনুমান করছেন। |
|
বাঁচে না |
জীবিত থাকবে না, রক্ষা পাবে না। |
মারা যাবে, জীবন থাকবে না। |
|
এবার |
এই সময়, এই পরিস্থিতিতে। |
এই অসুস্থতার কারণে। |
|
আর |
আর, আর বেশি নয়,
এখন থেকে। |
আর বাঁচবে না। |
|
চারিধারে |
চারদিকে, আশেপাশে, চারপাশে। |
পুত্রের চারিদিকে। |
|
তার |
তাঁর (এই ক্ষেত্রে হুমায়ুনের)। |
হুমায়ুনের। |
|
ঘনায়ে |
জমা হয়ে, ঘন হয়ে, এগিয়ে
এসে। |
ক্রমশ ঘিরে আসছে বা ছেয়ে যাচ্ছে। |
|
আসিছে |
আসছে, আগমন করছে। |
ঘনীভূত হচ্ছে। |
|
মরন-অন্ধকার |
মৃত্যুর অন্ধকার (একটি রূপক শব্দ)। |
মৃত্যু, জীবনের সমাপ্তি, নিরাশা। |
"রাজ্যের যত বিজ্ঞ হেকিম কবিরাজ দরবেশ /
এসেছে সবাই, দিতেছে বসিয়া ব্যবস্থা সবিশেষ, /
সেবাযত্নের বিধিবিধানের ত্রুটি নাহি এক লেশ।"
|
শব্দ |
আধুনিক বা প্রচলিত অর্থ |
কবিতার প্রেক্ষাপটে অর্থ |
|
রাজ্যের |
দেশের বা রাজ্যের (এই
ক্ষেত্রে মুঘল সাম্রাজ্যের)। |
বাদশাহর সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। |
|
বিজ্ঞ |
জ্ঞানী, পণ্ডিত, বিচক্ষণ। |
অভিজ্ঞ ও সেরা। |
|
হেকিম |
ইউনানি পদ্ধতির চিকিৎসক। |
প্রাচীন বা দেশীয় চিকিৎসক। |
|
কবিরাজ |
আয়ুর্বেদিক বা দেশীয় পদ্ধতির
চিকিৎসক। |
অভিজ্ঞ ও শাস্ত্রজ্ঞ বৈদ্য। |
|
দরবেশ |
ধার্মিক ব্যক্তি, ফকির বা সন্ন্যাসী। |
যারা আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে আরোগ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করেন। |
|
সবিশেষ |
বিস্তারিত, বিশেষ রূপে, খুঁটিনাটি সহ। |
রোগের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত খুঁটিনাটি ব্যবস্থা। |
|
দিতেছে বসিয়া |
বসে বসে দিচ্ছে/প্রদান করছে। |
বসে স্থিরভাবে (সময় নিয়ে) পরামর্শ বা চিকিৎসা পদ্ধতি
দিচ্ছে। |
|
ব্যবস্থা |
উপায়, বিধান, চিকিৎসার পদ্ধতি। |
রোগের প্রতিকারের উপায় বা চিকিৎসার পরিকল্পনা। |
|
সেবাযত্নের |
সেবা ও পরিচর্যার। |
অসুস্থ হুমায়ুনের দেখভাল বা পরিচর্যার। |
|
বিধিবিধানের |
নিয়ম-কানুন, আইন বা প্রণালী। |
সেবাযত্ন বা চিকিৎসার নিয়মের। |
|
ত্রুটি |
ভুল, খুঁত, কমতি, দোষ। |
কোনো ধরনের অভাব বা অবহেলা। |
|
নাহি এক লেশ |
সামান্যতমও নেই। |
বিন্দুমাত্র ত্রুটি বা কমতি নেই। |
"তবু তাঁর সেই দুরন্ত রোগ হটিতেসে নাকো হায়, /
যত দিন যায়, দুর্ভোগ তার ততই বারিয়া যায়— /
জীবন-প্রদীপ নিভিয়া আসিছে অস্তরবির প্রায়।"
|
শব্দ |
অর্থ |
|
তবু |
তারপরও, সত্ত্বেও, তবুও। |
|
দুরন্ত |
প্রচণ্ড, কঠিন, দমন করা কঠিন এমন। (এখানে রোগের তীব্রতাকে বোঝাচ্ছে)। |
|
রোগ |
অসুখ, ব্যাধি, অসুস্থতা। |
|
হটিতেসে নাকো |
সরে যাচ্ছে না, দূর হচ্ছে না, সারছে না। (প্রাচীন বা কাব্যিক রূপ)। |
|
হায় |
আক্ষেপ বা দুঃখ প্রকাশের অব্যয়। |
|
দুর্ভোগ |
কষ্ট, দুর্দশা, ভোগান্তি। |
|
ততই বারিয়া যায় |
তত বেশি বেড়ে যায়, ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। |
|
জীবন-প্রদীপ |
জীবনকে প্রদীপের শিখার সাথে তুলনা করা হয়েছে; জীবনের আলো, প্রাণ। |
|
নিভিয়া আসিছে |
নিভে আসছে, শেষ হতে চলেছে। |
|
অস্তরবির প্রায় |
অস্তগামী সূর্যের মতো, অর্থাৎ সূর্য যেমন ডুবে যায়, তেমনি জীবনও শেষ হয়ে যাচ্ছে। |
"শুধাল বাবর ব্যগ্রকন্ঠে ভিষকব্রিন্দে
ডাকি, /
‘বলো বলো আজি সত্যি করিয়া, দিও নাকো মোরে ফাঁকি, /
এই রোগ হতে বাদশাজাদার মুক্তি মিলিবে নাকি?”
|
শব্দ |
অর্থ |
|
শুধাল |
জিজ্ঞাসা করল, জানতে চাইল। |
|
ব্যগ্রকন্ঠে |
ব্যাকুল বা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে, অত্যন্ত আগ্রহের সাথে। |
|
ভিষকব্রিন্দে |
চিকিৎসকবৃন্দকে,
ডাক্তারদের দলকে। ('ভিষক' অর্থ চিকিৎসক এবং 'বৃন্দ' অর্থ দল)। |
|
আজি |
আজ, এই দিনে। |
|
ফাঁকি |
প্রতারণা, মিথ্যা কথা, ছলনা। |
|
বাদশাজাদার |
বাদশাহের পুত্রের, যুবরাজের। (এখানে হুমায়ুনের কথা বলা হয়েছে)। |
|
মুক্তি মিলিবে |
মুক্তি পাওয়া যাবে, নিস্তার পাওয়া যাবে, আরোগ্য লাভ হবে। |
|
নাকি |
কিনা, কি না (প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার জন্য ব্যবহৃত হয়)। |
"নতমস্তকে রহিল সবাই, কহিল না কোনো কথা, /
মুখর হইয়া উঠিল তাঁদের সে নিষ্ঠুর নীরবতা /
শেলসম আসি বাবরের বুকে বিঁধিল কিসের ব্যাথা!"
|
শব্দ |
অর্থ |
|
নতমস্তকে |
মাথা নিচু করে, বিনয়ের সাথে বা হতাশার কারণে মাথা ঝুঁকে। |
|
রহিল সবাই |
সবাই রইল, অর্থাৎ সবাই সেইভাবে (মাথা নিচু করে) থাকল। |
|
কহিল না |
বলল না, মুখ খুলল না। |
|
মুখর হইয়া উঠিল |
সরব হয়ে উঠল, জোরে উচ্চারিত হলো বা প্রকাশিত হলো। (এখানে নীরবতাই কথা হয়ে উঠল)। |
|
নিষ্ঠুর |
নির্মম, অত্যন্ত কঠিন, হৃদয়হীন। |
|
নীরবতা |
চুপ থাকা, কোনো কথা না বলা। |
|
শেলসম |
শেলের মতো, তীরের মতো, (তীব্র আঘাতকারী অস্ত্রের মতো)। |
|
আসি |
এসে। |
|
বিঁধিল |
গেঁথে গেল, আঘাত করল। |
|
ব্যাথা |
বেদনা, কষ্ট, যন্ত্রণা। |
"হেনকালে এক দরবেশ উঠি কহিলেন—‘সুলতান,
সবচেয়ে তব শ্রেষ্ট যে-ধন দিতে যদি পার দান,
খুশি হয়ে তবে বাঁচাবে আল্লা বাদশাজাদার প্রান।’"
|
শব্দ |
অর্থ |
|
হেনকালে |
এই সময়ে, এমন সময়। |
|
দরবেশ |
সাধু, ফকির, ধার্মিক ব্যক্তি বা সন্ন্যাসী। |
|
উঠি কহিলেন |
উঠে দাঁড়িয়ে বললেন। |
|
সুলতান |
রাজা, শাসক, সম্রাট (এখানে বাবরকে সম্বোধন করা হয়েছে)। |
|
সবচেয়ে তব শ্রেষ্ঠ যে-ধন |
তোমার (তব) সবথেকে দামি সম্পদ বা মূল্যবান জিনিস। |
|
দিতে যদি পার দান |
যদি তুমি দান করতে পারো বা উৎসর্গ করতে পারো। |
|
খুশি হয়ে |
সন্তুষ্ট হয়ে। |
|
আল্লা |
ঈশ্বর, আল্লাহ (স্রষ্টা)। |
|
বাদশাজাদার প্রাণ |
বাদশাহের পুত্রের জীবন। |
"শুনিয়া সে কথা কহিল বাবর শঙ্কা নাহিক মানি- /
‘তাই যদি হয়, প্রস্তুত আমি দিতে সেই কোরবানি, /
সবচেয়ে মোর শ্রেষ্ঠ যে ধন জানি তাহা আমি জানি।’
|
শব্দ |
অর্থ |
|
শুনিয়া সে কথা |
সেই কথাটি শুনে। |
|
কহিল বাবর |
বাবর বললেন। |
|
শঙ্কা |
ভয়, দ্বিধা, সংশয়। |
|
নাহিক মানি |
মানি না, গ্রাহ্য করি না, পরোয়া করি না। |
|
তাই যদি হয় |
যদি তাই হয়, যদি এটাই শর্ত হয়। |
|
প্রস্তুত আমি |
আমি তৈরি, আমি রাজি। |
|
কোরবানি |
আত্মত্যাগ, উৎসর্গ, দান (এখানে জীবনের বিনিময়ে দান বোঝানো হয়েছে)। |
|
সবচেয়ে মোর শ্রেষ্ঠ যে ধন |
আমার (মোর) সবথেকে মূল্যবান সম্পদ। |
|
জানি তাহা আমি জানি |
আমি সেটি জানি, অর্থাৎ কী দান করতে হবে সে বিষয়ে তার স্পষ্ট ধারণা আছে। |
"এতেক বলিয়া আসন পাতিয়া নিরিবিলি গৃহতল
গভীর ধেয়ানে বসিল বাবর শান্ত অচঞ্চল,
প্রার্থনারত
হাতদুটি তাঁর, নয়নে অশ্রু জল।"
|
শব্দ |
অর্থ |
|
এতেক বলিয়া |
এতটুকু বলে, এই কথা বলে। |
|
আসন পাতিয়া |
বসার স্থান তৈরি করে, বসার জন্য মাদুর বা কিছু বিছিয়ে। |
|
নিরিবিলি |
নির্জন, নিস্তব্ধ, শান্ত। |
|
গৃহতল |
ঘরের মেঝে বা ভিতরের অংশ। |
|
গভীর ধেয়ানে |
গভীর ধ্যানে, গভীর চিন্তায় বা প্রার্থনায় মগ্ন হয়ে। |
|
বসিল বাবর |
বাবর বসলেন। |
|
শান্ত অচঞ্চল |
শান্ত এবং স্থির, কোনো প্রকার নড়াচড়া বা উদ্বেগহীন। |
|
প্রার্থনারত |
প্রার্থনা করছে এমন, হাতজোড় করে বা বিশেষ ভঙ্গিতে। |
|
নয়নে অশ্রু জল |
চোখে অশ্রু বা চোখের জল। |
কহিল কাঁদিয়া- ‘হে দয়াল খোদা, হে রহিম রহমান,
মোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় আমারি আপন প্রাণ,
তাই নিয়ে প্রভু পুত্রের প্রান কর মোরে প্রতিদান।
|
শব্দ |
অর্থ |
|
কহিল কাঁদিয়া |
কেঁদে কেঁদে বললেন। |
|
দয়াল খোদা |
করুণাময় ঈশ্বর, দয়ালু সৃষ্টিকর্তা। |
|
রহিম রহমান |
আল্লাহ্র দুটি গুণবাচক নাম, যার অর্থ পরম করুণাময় ও দয়াবান। |
|
মোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় |
আমার (মোর) জীবনের সবথেকে মূল্যবান/আকর্ষণীয়। |
|
আমারি আপন প্রাণ |
আমার নিজের জীবন, আমার সত্তা। |
|
তাই নিয়ে প্রভু |
সেটাই গ্রহণ করে বা তার বিনিময়ে, হে ঈশ্বর। |
|
পুত্রের প্রাণ |
সন্তানের জীবন। |
|
কর মোরে প্রতিদান |
আমাকে প্রতিদান স্বরূপ দাও, আমার পুত্রের জীবন বাঁচাও। |
স্তব্ধ-নীরব গৃহতল, মুখে নাহি তার বাণী,
গভীর রজনী, সুপ্তি-মগন নিখিল বিশ্বরাণী,
আকাশে বাতাসে ধ্বনিতেছে যেন গোপন কী কানাকানি।
|
শব্দ |
অর্থ |
|
স্তব্ধ-নীরব |
সম্পূর্ণ চুপচাপ, একেবারে নীরব ও নিস্তব্ধ। |
|
গৃহতল |
ঘরের মেঝে বা ভিতরের অংশ। |
|
মুখে নাহি তার বাণী |
তাঁর মুখে কোনো কথা নেই। |
|
গভীর রজনী |
গভীর রাত, মাঝরাত। |
|
সুপ্তি-মগন |
ঘুমে মগ্ন, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। |
|
নিখিল |
সমগ্র, সমস্ত, গোটা। |
|
বিশ্বরাণী |
বিশ্ব (পৃথিবী) যেন এক রাণী, অর্থাৎ সমস্ত পৃথিবী। (এখানে পৃথিবী গভীর ঘুমে মগ্ন বোঝানো হয়েছে)। |
|
ধ্বনিতেছে যেন |
যেন আওয়াজ হচ্ছে বা শব্দ শোনা যাচ্ছে। |
|
গোপন কী কানাকানি |
গোপনে কোনো ফিসফিসানি, রহস্যময় বা অলৌকিক কিছু কথা। |
সহসা বাবর ফুকারি উঠিল—’নাহি ভয় নাহি ভয়,
প্রার্থনা মোর কবুল করেছে আল্লাহ হে দয়াময়,
পুত্র আমার বাঁচিয়া উঠিবে—মরিবে না নিশ্চয়।
|
শব্দ |
অর্থ |
|
সহসা |
হঠাৎ করে, আকস্মিকভাবে। |
|
ফুকারি উঠিল |
চিৎকার করে উঠল, জোরে বলে উঠল। |
|
নাহি ভয় |
ভয় নেই। |
|
প্রার্থনা মোর |
আমার (মোর) প্রার্থনা বা আবেদন। |
|
কবুল করেছে |
গ্রহণ করেছে, মঞ্জুর করেছে, স্বীকার করেছে। |
|
আল্লাহ হে দয়াময় |
হে দয়ালু আল্লাহ, করুণাময় ঈশ্বর। |
|
বাঁচিয়া উঠিবে |
সুস্থ হয়ে উঠবে, জীবন ফিরে পাবে। |
|
মরিবে না নিশ্চয় |
নিশ্চিতভাবে
বা অবশ্যই মারা যাবে না। |
"ঘুরিতে লাগিল পুলকে বাবর পুত্রের চারিপাশ
নিরাশ হৃদয় সে যেন আশায় দৃপ্ত জয়োল্লাস,
তিমির রাতের তোরণে তোরণে ঊষার পূর্বাভাস।
|
শব্দ |
অর্থ |
|
ঘুরিতে লাগিল |
ঘুরতে শুরু করল। |
|
পুলকে |
আনন্দে, খুশিতে, পুলকিত হয়ে। |
|
পুত্রের চারিপাশ |
পুত্রের চারপাশে, পুত্রের চারিদিকে। |
|
নিরাশ হৃদয় |
হতাশ মন বা আশা হারানো হৃদয়। |
|
আশায় দৃপ্ত জয়োল্লাস |
আশার কারণে গর্বিত এবং বিজয়ের আনন্দ। |
|
তিমির |
অন্ধকার। |
|
রাতের তোরণে তোরণে |
রাতের প্রবেশদ্বারগুলিতে বা বিভিন্ন স্তরে। (অন্ধকারের শেষ বোঝাতে ব্যবহৃত)। |
|
ঊষার পূর্বাভাস |
ভোরের আগমন বার্তা, অন্ধকারের শেষে আলোর আগমন। |
"সেইদিন হতে রোগ-লক্ষণ দেখা দিলে বাবরের,
হৃষ্টচিত্তে
গ্রহন করিল শয্যা সে মরণের,
নতুন জীবন হুমায়ুন ধিরে বাঁচিয়া উঠিল ফের।"
|
শব্দ |
অর্থ |
|
সেইদিন হতে |
সেই দিন থেকে শুরু করে। |
|
রোগ-লক্ষণ |
রোগের চিহ্ন বা উপসর্গ। |
|
দেখা দিলে বাবরের |
বাবরের শরীরে প্রকাশ পেল। |
|
হৃষ্টচিত্তে |
আনন্দিত মনে, খুশি মনে। |
|
গ্রহন করিল |
গ্রহণ করল, মেনে নিল। |
|
শয্যা সে মরণের |
সেই মৃত্যুর শয্যা, অর্থাৎ মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া। |
|
নতুন জীবন হুমায়ুন |
হুমায়ুনের নতুন জীবন। |
|
ধিরে |
ধীরে ধীরে, আস্তে আস্তে। |
|
বাঁচিয়া উঠিল ফের |
আবার সুস্থ হয়ে উঠল, জীবন ফিরে পেল। |
"মরিল বাবর – না, না ভুল কথা, মৃত্যু কে তারে কয়?
মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়,
পিতৃস্নেহের
কাছে হইয়াছে মরনের পরাজয়!"
|
শব্দ |
অর্থ |
|
মরিল বাবর |
বাবর মারা গেলেন। |
|
মৃত্যু কে তারে কয়? |
মৃত্যুকে কে তাকে বলে? (অর্থাৎ, তার এই ত্যাগ সাধারণ মৃত্যু নয়)। |
|
মরিয়া বাবর |
(নিজের
প্রাণ) ত্যাগ করে বা মারা গিয়ে বাবর। |
|
অমর হয়েছে |
অমরত্ব লাভ করেছে, চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। |
|
নাহি তার কোন ক্ষয় |
তার কোনো বিনাশ নেই, তার ত্যাগের মূল্য কখনো কমবে না। |
|
পিতৃস্নেহের
কাছে |
বাবার ভালোবাসার কাছে। |
|
হইয়াছে |
হয়েছে। |
|
মরণের পরাজয় |
মৃত্যুর হার, মৃত্যু পরাভূত হয়েছে। |
১. গভীর উদ্বেগ
|
কবিতার লাইন |
ব্যাখ্যা
(Interpretation) |
|
"বাদশা
বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর-" |
বাদশার মনে কোনো শান্তি নেই। পুত্র হুমায়ুনের জীবন নিয়ে তিনি এতটাই উদ্বিগ্ন যে তাঁর চোখে
জল, কিন্তু চোখে ঘুম নেই। |
|
"পুত্র
তাঁহার হুনায়ন বুঝি বাঁচে না এবার আর! চারিধারে তার ঘনায়ে আসিছে মরন-অন্ধকার।" |
পুত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃত্যুদূত যেন চারপাশ থেকে ঘিরে আসছে, যা বাবার চোখে
ধরা পড়ছে। |
২.
ব্যর্থ চেষ্টা
|
কবিতার লাইন |
ব্যাখ্যা
(Interpretation) |
|
"রাজ্যের
যত বিজ্ঞ হেকিম কবিরাজ দরবেশ / এসেছে সবাই, দিতেছে বসিয়া ব্যবস্থা সবিশেষ, / সেবাযত্নের বিধিবিধানের ত্রুটি নাহি এক লেশ।" |
পুত্রকে বাঁচানোর জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা
চলছে। রাজ্যের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকরা এসেছেন এবং কোনো ত্রুটি রাখা হয়নি। |
|
"তবু
তাঁর সেই দুরন্ত রোগ হটিতেসে নাকো হায়, / যত দিন যায়, দুর্ভোগ তার ততই বারিয়া যায়— / জীবন-প্রদীপ নিভিয়া আসিছে অস্তরবির প্রায়।" |
এত চেষ্টা সত্ত্বেও রোগ সারছে না। বরং দিন দিন কষ্ট বাড়ছে এবং মনে হচ্ছে জীবন-প্রদীপটি অস্তগামী সূর্যের মতোই নিভে যাবে। |
৩.
নীরব উত্তর
|
কবিতার লাইন |
ব্যাখ্যা
(Interpretation) |
|
"শুধাল
বাবর ব্যগ্রকন্ঠে ভিষকব্রিন্দে ডাকি, / ‘বলো বলো আজি সত্যি করিয়া, দিও নাকো মোরে ফাঁকি, / এই রোগ হতে বাদশাজাদার মুক্তি মিলিবে নাকি?”" |
পিতা হিসেবে বাবর শেষবারের মতো আশা খুঁজছেন। তিনি স্পষ্ট উত্তর জানতে চান, কোনো মিথ্যে সান্ত্বনা চান না। |
|
"নতমস্তকে
রহিল সবাই, কহিল না কোনো কথা, / মুখর হইয়া উঠিল তাঁদের সে নিষ্ঠুর নীরবতা / শেলসম আসি বাবরের বুকে বিঁধিল কিসের ব্যাথা!" |
চিকিৎসকরা কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। তাদের এই নীরবতাই ছিল
সবচেয়ে কঠিন উত্তর—হুমায়ুনের বাঁচার আশা নেই। এই নীরবতাই বাবরের
মনে গভীর বেদনা সৃষ্টি করে। |
৪.
দরবেশের শর্ত
|
কবিতার লাইন |
ব্যাখ্যা
(Interpretation) |
|
"হেনকালে
এক দরবেশ উঠি কহিলেন—‘সুলতান, / সবচেয়ে তব শ্রেষ্ট যে-ধন দিতে যদি পার দান, / খুশি হয়ে তবে বাঁচাবে আল্লা বাদশাজাদার প্রান।’" |
কাহিনিতে মোড় এসেছে। চিকিৎসার বদলে এখন ঈশ্বরের কাছে ত্যাগের মাধ্যমে পুত্রের প্রাণভিক্ষার শর্ত দেওয়া হচ্ছে। |
|
"শুনিয়া
সে কথা কহিল বাবর শঙ্কা নাহিক মানি- / ‘তাই যদি হয়, প্রস্তুত আমি দিতে সেই কোরবানি, / সবচেয়ে মোর শ্রেষ্ঠ যে ধন জানি তাহা আমি জানি।’" |
বাবর কোনো দ্বিধা করেননি। তিনি বিশ্বাস করেন, পুত্রের জীবনের চেয়ে দামি আর কিছু হতে
পারে না, এবং তিনি সেই ত্যাগ করতে জানেন। |
৫.
চরম ত্যাগ
|
কবিতার লাইন |
ব্যাখ্যা
(Interpretation) |
|
"এতেক
বলিয়া আসন পাতিয়া নিরিবিলি গৃহতল / গভীর ধেয়ানে বসিল বাবর শান্ত অচঞ্চল, / প্রার্থনারত হাতদুটি তাঁর, নয়নে অশ্রু জল।" |
বাবর ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুত হলেন। তিনি গভীর মনোযোগে (ধেয়ানে) বসলেন। |
|
"কহিল
কাঁদিয়া- ‘হে দয়াল খোদা, হে রহিম রহমান, / মোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় আমারি আপন প্রাণ, / তাই নিয়ে প্রভু পুত্রের প্রান কর মোরে প্রতিদান।’" |
চূড়ান্ত ত্যাগ: বাবর বুঝতে পারেন যে সাম্রাজ্য নয়,
ক্ষমতা নয়—তাঁর কাছে
সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধন হলো তাঁর
নিজের জীবন। তিনি শর্ত মেনে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চাইলেন। |
৬.
অলৌকিক মোড় ও পরিণতি
|
কবিতার লাইন |
ব্যাখ্যা
(Interpretation) |
|
"স্তব্ধ-নীরব গৃহতল, মুখে নাহি তার বাণী, / গভীর রজনী, সুপ্তি-মগন নিখিল বিশ্বরাণী, / আকাশে বাতাসে ধ্বনিতেছে যেন গোপন কী কানাকানি।" |
বাবরের প্রার্থনার গভীরতা প্রকৃতিতেও প্রভাব ফেলেছে। মনে হচ্ছে যেন ঈশ্বর বা প্রকৃতির সঙ্গে
কোনো গোপন বোঝাপড়া চলছে। |
|
"সহসা
বাবর ফুকারি উঠিল—’নাহি ভয় নাহি ভয়, / প্রার্থনা মোর কবুল করেছে আল্লাহ হে দয়াময়, / পুত্র আমার বাঁচিয়া উঠিবে—মরিবে না নিশ্চয়।’" |
বাবর অলৌকিকভাবে অনুভব করলেন যে তাঁর কোরবানি
আল্লাহ গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর পুত্র বাঁচবে। এটি তাঁর ত্যাগের ফল। |
|
"ঘুরিতে
লাগিল পুলকে বাবর পুত্রের চারিপাশ / নিরাশ হৃদয় সে যেন আশায় দৃপ্ত জয়োল্লাস, / তিমির রাতের তোরণে তোরণে ঊষার পূর্বাভাস।" |
বাবরের হৃদয়ে এখন জয়োল্লাস। তিনি নিশ্চিত, তাঁর পুত্র জীবন ফিরে পাবে। |
|
"সেইদিন
হতে রোগ-লক্ষণ দেখা দিলে বাবরের, / হৃষ্টচিত্তে গ্রহন করিল শয্যা সে মরণের, / নতুন জীবন হুমায়ুন ধিরে বাঁচিয়া উঠিল ফের।" |
বাবরের জীবনের বিনিময়ে হুমায়ুনের জীবন রক্ষা পেল। পিতা নিজের মৃত্যুশয্যাকে সানন্দে বরণ করলেন। |
|
"মরিল
বাবর – না, না ভুল কথা, মৃত্যু কে তারে কয়? / মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়, / পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরনের পরাজয়!" |
উপসংহার:
বাবর শারীরিকভাবে মারা গেলেও, তাঁর আত্মত্যাগ তাঁকে অমরত্ব দিয়েছে। এই মহান পিতৃস্নেহের
কাছে মৃত্যুও পরাজিত হয়েছে। |
'জীবন বিনিময়' কবিতা থেকে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো। মনে রাখবেন, এই কবিতাটির রচয়িতা হলেন কবি গোলাম মোস্তফা।
জীবন বিনিময় কবিতা: ৩০টি জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. 'জীবন বিনিময়' কবিতাটি কে লিখেছেন?
উত্তর:
কবি গোলাম মোস্তফা।
২. কবিতাটি কবি গোলাম মোস্তফার কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: 'বুলবুলিস্তান' কাব্যগ্রন্থ থেকে।
৩. 'জীবন বিনিময়' কবিতায় কোন বাদশার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মোগল সম্রাট বাবরের কথা বলা হয়েছে।
৪. বাদশাহ বাবরের পুত্রের নাম কী?
উত্তর: হুমায়ুন।
৫. হুমায়ুন কী রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন?
উত্তর:
একটি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
৬. কবি কবিতায় কার নীরবতাকে নিষ্ঠুর বলেছেন?
উত্তর: চিকিৎসকবৃন্দের নীরবতাকে।
৭. চিকিৎসকগণের নীরবতা কীসের প্রতীক?
উত্তর: হুমায়ুনের জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়ার প্রতীক।
৮. 'নিদ' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:
ঘুম।
৯. 'ভিষকবৃন্দ' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:
চিকিৎসকগণ।
১০. 'বাদশাজাদা' কাকে বলা হয়েছে?
উত্তর:
সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ুনকে।
১১. বাবরের হৃদয়ে কীসের মতো বেদনা বিঁধল?
উত্তর: শেলের মতো।
১২. 'শেলসম' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:
শেলের মতো বা তীক্ষ্ণ অস্ত্রের মতো।
১৩. দরবেশ এসে সম্রাটকে কীসের বিনিময়ে পুত্রের প্রাণ রক্ষার কথা বললেন?
উত্তর:
সম্রাটের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধন দান করার বিনিময়ে।
১৪. দরবেশের মতে, হুমায়ুনের জীবন বাঁচাতে হলে সম্রাটকে কী করতে হবে?
উত্তর:
সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধন দান করতে হবে।
১৫. 'কোরবানি' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: উৎসর্গ বা আত্মত্যাগ।
১৬. বাবর তাঁর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধন কী বলে উপলব্ধি করলেন?
উত্তর:
নিজের প্রাণ বা জীবন।
১৭. বাবর কীভাবে পুত্রের জীবন ভিক্ষা চাইলেন?
উত্তর: নিজের জীবনের বিনিময়ে।
১৮. 'আস্ত-রবি' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: অস্তগামী সূর্য।
১৯. 'সুপ্তি-মগন' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ঘুমে অচেতন বা গভীর ঘুমে থাকা।
২০. 'ফুকারি' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:
চিৎকার করে বা উচ্চস্বরে।
২১. বাবর কার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনের কোরবানি দিতে চাইলেন?
উত্তর: আল্লাহর (বিধাতার) কাছে।
২২. বাবরের প্রার্থনা কীভাবে মঞ্জুর হলো?
উত্তর: গভীর রাতে দরবেশের মাধ্যমে তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর হলো।
২৩. 'কবুল' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: স্বীকার বা গৃহীত।
২৪. 'তিমির রাতের তোরণে ঊষার পূর্বাভাস' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: মুমূর্ষু অবস্থার অবসানে রোগমুক্তির লক্ষণকে বোঝানো হয়েছে।
২৫. বাবর হৃষ্টচিত্তে কী গ্রহণ করলেন?
উত্তর:
মরণের শয্যা গ্রহণ করলেন।
২৬. কার জীবন বিনিময়ে হুমায়ুন আবার সুস্থ হয়ে উঠলেন?
উত্তর:
সম্রাট বাবরের জীবন বিনিময়ে।
২৭. 'জীবন বিনিময়' কবিতায় কিসের পরাজয় দেখানো হয়েছে?
উত্তর:
মরণের পরাজয়।
২৮. এই কবিতায় কিসের অমরত্বের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: পিতৃস্নেহের অমরত্বের কথা।
২৯. বাবরের মৃত্যুতে কী অমর হয়েছে?
উত্তর: পিতৃস্নেহ।
৩০. 'বিনিময়' শব্দের সাধারণ অর্থ কী?
উত্তর: বদল বা অদলবদল।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. প্রশ্ন: "ভিষকবৃন্দ নীরব, না আছে কোনো কথা" – উক্তিটির কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: চিকিৎসকরা হুমায়ুনকে বাঁচাতে না পেরে আশা
ছেড়ে দিয়েছিলেন।
হুমায়ুনের রোগ এত মারাত্মক
ছিল যে, কোনো চিকিৎসা
কাজ করছিল না। তাই হতাশ
হয়ে চিকিৎসকরা কোনো কথা বলার
সাহস পাচ্ছিলেন না।
২. প্রশ্ন: বাবরের হৃদয়ে শেলসম ব্যথা বিঁধেছিল কেন?
উত্তর: পুত্রের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে বাবা হিসেবে
তিনি প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিলেন।
হুমায়ুন মুমূর্ষু হওয়ায় এবং চিকিৎসকদের ব্যর্থতা
দেখে বাবরের মনে খুব তীব্র
শোকের সৃষ্টি হয়েছিল। এই কষ্টকে কবি
শেলের আঘাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
৩. প্রশ্ন: দরবেশের দেওয়া 'শ্রেষ্ঠ ধন' দানের শর্তটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সন্তানের প্রাণ বাঁচাতে নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি উৎসর্গ করতে হবে।
দরবেশ চেয়েছিলেন বাবর তাঁর জীবনকে
কোরবানি দিন, কারণ সন্তানের
জীবনের চেয়ে মূল্যবান সম্পদ আর কিছু হতে
পারে না। এই ত্যাগই
ছিল শর্ত।
৪. প্রশ্ন: "দু'টি চোখের জলে ভেসে গেল দশ দিক" – চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বাবর পুত্রের শোকে
এতটাই কেঁদেছিলেন যে তার কোনো
সীমা ছিল না।
এটি আসলে একটি
বাড়িয়ে বলা কথা (অতিশয়োক্তি)। এর মাধ্যমে
কবির উদ্দেশ্য ছিল বাবরের সীমাহীন
এবং তীব্র শোককে প্রকাশ করা।
৫. প্রশ্ন: "জীবন বিনিময়" কথাটিতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: একজনের জীবনের বদলে অন্যজনের জীবন
ফিরে পাওয়া।
সম্রাট বাবর নিজের জীবন
উৎসর্গ করে মুমূর্ষু পুত্রের
জীবন বাঁচানোর যে প্রার্থনা করেছিলেন,
সেটাই হলো এই বিনিময়।
৬. প্রশ্ন: বাবর কেন নিজের জীবনকে 'শ্রেষ্ঠ ধন' বলে মনে করলেন?
উত্তর: জীবনের চেয়ে দামি সম্পদ পৃথিবীতে
আর কিছু নেই।
তিনি বুঝলেন, জীবন
থাকলেই সব কিছুর মূল্য
থাকে; তাই সন্তানের জীবন
বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন
উৎসর্গ করাই সবচেয়ে বড়
ত্যাগ।
৭. প্রশ্ন: "মৃত্যুর শিয়রে বসি তিনি যে করিলেন জয়" – কবি কী জয় করার কথা বলেছেন?
উত্তর: বাবর তাঁর ভালোবাসার
জোরে মৃত্যুকে জয় করেছিলেন।
বাবর নিজের জীবনের
বিনিময়ে পুত্রের জীবন দান করলেন।
এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, নিঃস্বার্থ
ভালোবাসার কাছে মৃত্যুও পরাজিত
হয়।
৮. প্রশ্ন: 'হৃষ্টচিত্তে' মরণের শয্যা গ্রহণ করার কারণ কী?
উত্তর: পুত্র সুস্থ হওয়ায় তিনি খুবই আনন্দিত
ও তৃপ্ত ছিলেন।
তাঁর প্রার্থনা কবুল
হয়েছে এবং তাঁর জীবন
বিনিময়ে পুত্র বেঁচে উঠছে—এই সন্তুষ্টিতে
তিনি হাসিমুখে মৃত্যুকে গ্রহণ করলেন।
৯. প্রশ্ন: "তিমির রাতের তোরণে ঊষার পূর্বাভাস" – বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: অন্ধকারের পর ভোর আসার
মতো, রোগ সেরে যাওয়ার
আশা দেখা দিয়েছিল।
হুমায়ুনের কঠিন রোগাচ্ছন্ন অবস্থা
ছিল 'তিমির রাত' আর সুস্থতার
লক্ষণ ছিল 'ঊষার পূর্বাভাস'। অর্থাৎ, অবস্থার
দ্রুত উন্নতি হচ্ছিল।
১০. প্রশ্ন: কবিতাটির মূল প্রতিপাদ্য কী?
উত্তর: বাবার ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের কাছে
মৃত্যু হেরে গিয়েছিল।
এই কবিতা শেখায়
যে, পিতার ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জিনিস এবং এই ভালোবাসা
মরণের চেয়েও শক্তিশালী।
১১. প্রশ্ন: বাবর কীভাবে তাঁর পুত্রকে কোলে নিলেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মুমূর্ষু পুত্রকে গভীর মায়া ও
শোকের সাথে কোলে নিলেন।
তিনি মৃত্যুর ঠিক
পাশে বসে পুত্রকে কোলে
নিয়ে শেষ আশ্রয় দিলেন।
এটি ছিল বাবার অটল
ভালোবাসা ও সাহস দেখানোর
প্রতীক।
১২. প্রশ্ন: বাবর কোন শর্তে নিজের জীবন দিতে চাইলেন?
উত্তর: তাঁর জীবন চলে
গেলে যেন পুত্রের জীবন
রক্ষা পায়।
বাবর সৃষ্টিকর্তার কাছে
শর্ত দিলেন, যদি তাঁর মৃত্যু
হয় তবেই যেন হুমায়ুন
সুস্থ হন। এটাই ছিল
বাবার শর্ত।
১৩. প্রশ্ন: "আস্ত-রবি ঢোলে নিদ-সুপ্তি-মগন" দ্বারা কেমন দৃশ্য চিত্রিত হয়েছে?
উত্তর: সূর্যাস্তের পর রাতের নীরব
ও ঘুমন্ত পরিবেশকে বোঝানো হয়েছে।
এই পঙক্তি ইঙ্গিত
করে যে, শোকের ভারে
যেন প্রকৃতিও ঘুমিয়ে পড়েছে। একইসাথে এটি হুমায়ুনের জীবনের
আশা কমে যাওয়ারও প্রতীক।
১৪. প্রশ্ন: 'জীবন বিনিময়' কবিতায় কিসের অমরত্বের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: বাবার ভালোবাসা বা পিতৃস্নেহের অমরত্বের
কথা।
বাবর নিজের জীবন
উৎসর্গ করলেও তাঁর এই মহৎ
ভালোবাসা অমর হয়ে রইল।
ভালোবাসা কখনো মরে না,
এটাই এখানে বলা হয়েছে।
১৫. প্রশ্ন: হুমায়ুন সুস্থ হওয়ার পর বাবর কী আশা করেছিলেন?
উত্তর: হুমায়ুন বাঁচলে এবার তাঁর নিজের
মৃত্যু হবে।
বাবর জানতেন তাঁর
প্রার্থনা কবুল হয়েছে এবং
বিনিময়ের শর্ত পূরণ করতে
হবে। তাই তিনি শান্তভাবে
নিজের জীবনের শেষ আশা করলেন।
জীবন বিনিময়' কবিতা: সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
উদ্দীপক
সুমনের মা দীর্ঘদিন ধরে
দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন। পরিবারের ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিলে
সুমনের বাবা একদিন গভীর
রাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন।
তিনি বলেন, "হে প্রভু, যদি
আমার জীবনের বিনিময়ে আমার স্ত্রীর জীবন
রক্ষা পায়, তবে আমি হাসিমুখে
এই ত্যাগ স্বীকার করব।" আশ্চর্যভাবে, কিছুদিন পরই তাঁর স্ত্রী
সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু
এর অল্প সময়ের মধ্যেই
সুমনের বাবা গুরুতর অসুস্থ
হয়ে পড়েন এবং মৃত্যুবরণ করেন।
ক. 'জীবন বিনিময়' কবিতাটি কবি গোলাম মোস্তফার কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. বাবরের হৃদয়ে শেলসম ব্যথা বিঁধেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের সুমনের বাবার প্রার্থনা 'জীবন বিনিময়' কবিতার কোন দিকটি তুলে ধরে?
ঘ. "বাবর এবং সুমনের বাবার আত্মত্যাগ প্রমাণ করে যে, ভালোবাসার কাছে মৃত্যুও পরাজিত হয়।" – বিশ্লেষণ করো।
ক. 'জীবন বিনিময়' কবিতাটি কবি গোলাম মোস্তফার কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: 'জীবন বিনিময়' কবিতাটি
কবি গোলাম মোস্তফার 'বুলবুলিস্তান' কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।
খ. বাবরের হৃদয়ে শেলসম ব্যথা বিঁধেছিল কেন?
উত্তর:
বাবরের হৃদয়ে শেলসম ব্যথা বিঁধেছিল কারণ তিনি দেখলেন
তাঁর প্রিয় পুত্র হুমায়ুন মুমূর্ষু।
চিকিৎসকরা যখন পুত্রের জীবনের
আশা ছেড়ে দিলেন, তখন পিতা হিসেবে
সম্রাট বাবর অসহায় হয়ে
পড়েন। সন্তানের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে তাঁর মনে
যে তীব্র শোক ও যন্ত্রণা
এসেছিল, সেটাই শেলের আঘাতের মতো অনুভূত হয়েছিল।
গ. উদ্দীপকের সুমনের বাবার প্রার্থনা 'জীবন বিনিময়' কবিতার কোন দিকটি তুলে ধরে?
উত্তর:
উদ্দীপকের সুমনের বাবার প্রার্থনা 'জীবন বিনিময়' কবিতার
মূল বিষয় অর্থাৎ নিঃশর্ত আত্মত্যাগের দিকটি তুলে ধরে।
বাবর যেমন নিজের
জীবনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন চেয়েছিলেন, তেমনি
সুমনের বাবাও স্ত্রীর সুস্থতার জন্য নিজের জীবন
উৎসর্গ করার প্রার্থনা করেছিলেন।
উভয়ের প্রার্থনা কবুল হওয়ায় একজন
মারা গেলেও অন্যজন সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এই মিল থেকে
বোঝা যায়, উভয় ক্ষেত্রেই নিঃস্বার্থ
ভালোবাসার শক্তি কাজ করেছে, যা
নিজের জীবন দিয়েও প্রিয়জনের
জীবন রক্ষা করতে চায়।
ঘ. "বাবর এবং সুমনের বাবার আত্মত্যাগ প্রমাণ করে যে, ভালোবাসার কাছে মৃত্যুও পরাজিত হয়।" – বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:
উক্তিটি সম্পূর্ণ সত্য, কারণ বাবর ও
সুমনের বাবার আত্মত্যাগ ভালোবাসার কাছে মৃত্যুর পরাজয়কে
প্রমাণ করে।
'জীবন বিনিময়' কবিতায়
বাবর যখন নিজের জীবন
উৎসর্গ করে পুত্রের জীবন
ভিক্ষা চাইলেন, তখন তাঁর ভালোবাসার
শক্তি মরণের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে।
ভালোবাসার কারণেই বাবর তাঁর জীবনের
সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটি ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
একইভাবে, সুমনের বাবাও নিজের জীবনের বিনিময়ে স্ত্রীকে সুস্থ করে তোলেন। তিনি
প্রমাণ করেন, দাম্পত্য প্রেমের শক্তিও মৃত্যুকে পিছিয়ে দিতে পারে।
এই উভয় উদাহরণেই
দেখা যায়, একজন মানুষ মারা
গেলেও তাঁর ত্যাগ ও ভালোবাসা অমর হয়ে রইল এবং
অন্যজন জীবন ফিরে পেলেন।
সুতরাং, বাবর ও সুমনের
বাবার আত্মত্যাগ হলো সেই দৃষ্টান্ত,
যা দেখায় যে ভালোবাসা চিরন্তন এবং এটিই মৃত্যুকে
পরাজিত করার মূল শক্তি।
'জীবন বিনিময়' কবিতা: ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর ব্যাখ্যাসহ
১। 'জীবন বিনিময়'
কবিতাটি কে লিখেছেন?
ক) কাজী নজরুল
ইসলাম
খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গ) গোলাম মোস্তফা
ঘ) জসীমউদ্দীন
ব্যাখ্যা: নবম-দশম শ্রেণির
পাঠ্য 'জীবন বিনিময়' কবিতাটি
লিখেছেন কবি গোলাম মোস্তফা।
২। 'জীবন বিনিময়'
কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে
সংকলিত?
ক) হাস্নাহেনা
খ) মরু-ফুল
গ) কাব্য-কাহিনী
ঘ) বুলবুলিস্তান
ব্যাখ্যা: গোলাম মোস্তফা রচিত 'জীবন বিনিময়' কবিতাটি
তাঁর 'বুলবুলিস্তান' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
৩। 'জীবন বিনিময়'
কবিতায় কোন ঐতিহাসিক চরিত্রের
উল্লেখ আছে?
ক) শাহজাহান
খ) সম্রাট বাবর
গ) আকবর
ঘ) শেরশাহ
ব্যাখ্যা: কবিতাটিতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা
সম্রাট বাবরের উল্লেখ আছে।
৪। সম্রাট বাবরের
পুত্রের নাম কী?
ক) জাহাঙ্গীর
খ) শাহজাদা খুররম
গ) হুমায়ুন
ঘ) দারা শিকোহ
ব্যাখ্যা: মুমূর্ষু শাহজাদা হলেন বাবরের পুত্র
হুমায়ুন।
৫। হুমায়ুন কী
রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন?
ক) বসন্ত রোগ
খ) কলেরাজনিত রোগ
গ) সাধারণ জ্বর
ঘ) দুরারোগ্য ব্যাধি
ব্যাখ্যা: কবিতায় উল্লেখ আছে যে, হুমায়ুন
দুরারোগ্য এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
৬। 'ভিষকবৃন্দ' শব্দের
অর্থ কী?
ক) রাজ কর্মচারী
খ) দরবারের পণ্ডিতগণ
গ) সন্ন্যাসীগণ
ঘ) চিকিৎসকগণ
ব্যাখ্যা: 'ভিষকবৃন্দ' একটি তৎসম শব্দ,
যার অর্থ চিকিৎসকগণ বা ডাক্তাররা।
৭। চিকিৎসকরা নীরব
কেন ছিলেন?
ক) সম্রাটের আদেশে
খ) রোগের ভয়াবহতার
কারণে
গ) রাতের আঁধারে
ঘ) বাবরকে সম্মান
দেখানোর জন্য
ব্যাখ্যা: রোগটি নিরাময়ের অসাধ্য হওয়ায় এবং কোনো উপায়
না দেখতে পেয়ে চিকিৎসকরা হতাশ
হয়ে নীরব হয়ে যান।
৮। বাবরের হৃদয়ে
কীসের মতো ব্যথা বিঁধেছিল?
ক) তীরের মতো
খ) শেলের মতো
গ) তরবারির মতো
ঘ) বর্শার মতো
ব্যাখ্যা: পুত্রের শোকে হৃদয়ে যে
তীব্র যন্ত্রণা হয়েছিল, তাকে কবি শেলের
(তীব্র অস্ত্রের) মতো বলে উল্লেখ করেছেন।
৯। 'নিদ' শব্দের
অর্থ কী?
ক) দিন
খ) রাত
গ) ঘুম
ঘ) নীরবতা
ব্যাখ্যা: 'নিদ' হলো লোকজ
শব্দ, যার অর্থ ঘুম
বা নিদ্রা।
১০। বাবরের চোখের
জলে কী ভেসে গিয়েছিল?
ক) তাঁর রাজপ্রাসাদ
খ) তাঁর মুখমণ্ডল
গ) দশ দিক
ঘ) রাজদরবার
ব্যাখ্যা: শোকের আতিশয্য বোঝাতে কবি অতিরঞ্জিতভাবে বলেছেন
যে, তাঁর চোখের জলে
দশ দিক ভেসে গিয়েছিল।
১১। দরবেশ সম্রাটকে
কীসের বিনিময়ে পুত্রের জীবন রক্ষার কথা
বললেন?
ক) বহু ধন-সম্পদের
খ) রাজত্বের
গ) ক্ষমতার
ঘ) সর্বশ্রেষ্ঠ ধনের
ব্যাখ্যা: দরবেশ সম্রাটকে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ ধন সৃষ্টিকর্তার কাছে উৎসর্গ করার
কথা বলেছিলেন।
১২। 'কোরবানি' শব্দের
অর্থ কী?
ক) দান করা
খ) প্রার্থনা করা
গ) উৎসর্গ করা
ঘ) বিনিময় করা
ব্যাখ্যা: 'কোরবানি' শব্দের অর্থ হলো ত্যাগ
বা উৎসর্গ করা।
১৩। বাবর কোন
বস্তুকে তাঁর কাছে সবচেয়ে
'শ্রেষ্ঠ ধন' বলে মনে
করলেন?
ক) রাজকোষের হীরা-জহরত
খ) নিজের প্রাণ
গ) রাজমুকুট
ঘ) প্রিয় ঘোড়া
ব্যাখ্যা: বাবর উপলব্ধি করেন
যে, নিজের জীবনই তাঁর কাছে সবচেয়ে
মূল্যবান সম্পদ।
১৪। বাবর কার
কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনের কোরবানি দিতে
চাইলেন?
ক) দরবেশের কাছে
খ) ভিষকবৃন্দের কাছে
গ) বিধাতার কাছে
ঘ) পুত্র হুমায়ুনের
কাছে
ব্যাখ্যা: বাবর একমাত্র বিধাতার
(আল্লাহর) কাছেই তাঁর কোরবানি পেশ
করতে চাইলেন।
১৫। বাবর কী
বলে ঈশ্বরের কাছে পুত্রের জীবন
ভিক্ষা চাইলেন?
ক) বিপুল দানের
বিনিময়ে
খ) রাজ্যের বিনিময়ে
গ) নিজের জীবনের
বিনিময়ে
ঘ) অনেক সেবার
বিনিময়ে
ব্যাখ্যা: বাবর প্রার্থনা করেন
যেন তাঁর জীবন নিয়ে নেওয়া হয় এবং বিনিময়ে পুত্রের
জীবন রক্ষা পায়।
১৬। 'ফুকারি' শব্দের
অর্থ কী?
ক) ফুঁ দিয়ে
খ) ফিসফিস করে
গ) চিৎকার করে
ঘ) মুখ ঢেকে
ব্যাখ্যা: 'ফুকারি' শব্দের অর্থ হলো উচ্চস্বরে
চিৎকার করা বা ডেকে ওঠা।
১৭। 'আস্ত-রবি'
শব্দের অর্থ কী?
ক) উদীয়মান সূর্য
খ) অস্তগামী সূর্য
গ) পূর্ণ চন্দ্র
ঘ) সন্ধ্যা তারা
ব্যাখ্যা: 'আস্ত' মানে অস্ত যাওয়া,
তাই 'আস্ত-রবি' অর্থ
অস্তগামী সূর্য।
১৮। বাবর কোথায়
বসে পুত্রের জীবন ভিক্ষা করেন?
ক) রাজপ্রাসাদের ছাদে
খ) মসজিদের মিনারে
গ) উদ্যানের মধ্যে
ঘ) মৃত্যুর শিয়রে
ব্যাখ্যা: পুত্র যখন মুমূর্ষু, তখন
বাবর মৃত্যুর শিয়রে (পাশে) বসে প্রার্থনা করেন।
১৯। 'কবুল' শব্দের
অর্থ কী?
ক) বাতিল
খ) মিথ্যা
গ) স্বীকার বা
গৃহীত
ঘ) ভুলে যাওয়া
ব্যাখ্যা: 'কবুল' শব্দের অর্থ হলো কোনো
কিছু মঞ্জুর বা গৃহীত হওয়া।
২০। 'তিমির রাতের
তোরণে ঊষার পূর্বাভাস' বলতে
কী বোঝানো হয়েছে?
ক) ভোরের আগমন
খ) রাজত্বের পতন
গ) রোগমুক্তির লক্ষণ
ঘ) মৃত্যুর ঘোষণা
ব্যাখ্যা: অন্ধকার (রোগ) কেটে গিয়ে
আলোর (সুস্থতার) আগমন—অর্থাৎ রোগমুক্তির
লক্ষণ দেখা দেওয়া।
২১। হুমায়ুন সুস্থ
হওয়ার পর বাবর কী
গ্রহণ করলেন?
ক) রাজমুকুট
খ) রাজত্বভার
গ) মরণের শয্যা
ঘ) সন্ন্যাস
ব্যাখ্যা: যেহেতু তাঁর প্রার্থনা কবুল
হয়েছে, তাই বাবর মরণের
শয্যা গ্রহণ করলেন।
২২। বাবর কোন
চিত্তে মরণের শয্যা গ্রহণ করলেন?
ক) চিন্তিত চিত্তে
খ) শোকাহত চিত্তে
গ) ভয় নিয়ে
ঘ) হৃষ্টচিত্তে
ব্যাখ্যা: সন্তানের জীবন রক্ষা হওয়ায়
আনন্দে ও সন্তুষ্টিতে (হৃষ্টচিত্তে) তিনি মৃত্যুকে বরণ
করেন।
২৩। 'জীবন বিনিময়'
কবিতায় কিসের অমরত্বের কথা বলা হয়েছে?
ক) অর্থের অমরত্ব
খ) ক্ষমতার অমরত্ব
গ) পিতৃস্নেহের অমরত্ব
ঘ) রাজত্বের অমরত্ব
ব্যাখ্যা: বাবার আত্মত্যাগের মাধ্যমে পিতৃস্নেহের অমরত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২৪। কার জীবন
বিনিময়ে হুমায়ুন সুস্থ হয়ে উঠলেন?
ক) দরবেশের
খ) চিকিৎসকদের
গ) সম্রাট বাবরের
ঘ) অন্য কোনো
রাজকর্মচারীর
ব্যাখ্যা: সম্রাট বাবরের জীবনের বিনিময়েই হুমায়ুন সুস্থ হন।
২৫। 'বিনিময়' শব্দের
সাধারণ অর্থ কী?
ক) রক্ষা করা
খ) দান করা
গ) বদল বা
অদলবদল
ঘ) শপথ করা
ব্যাখ্যা: 'বিনিময়' বলতে কোনো কিছুর
বদল বোঝায়।
২৬। 'মৃত্যুর শিয়রে
বসি তিনি যে করিলেন
জয়' – এখানে কিসের জয় বোঝানো হয়েছে?
ক) ধর্মের জয়
খ) ভালোবাসার জয়
গ) জ্ঞানের জয়
ঘ) ক্ষমতার জয়
ব্যাখ্যা: এটি ভালোবাসার জয়—যে ভালোবাসা মৃত্যুকেও
পরাজিত করতে পারে।
২৭। 'জীবন বিনিময়'
কবিতায় কিসের পরাজয় দেখানো হয়েছে?
ক) ভালোবাসার
খ) মরণের
গ) পিতার
ঘ) পুত্রের
ব্যাখ্যা: পিতার ভালোবাসার কাছে মরণ (মৃত্যু) পরাজিত হয়েছে।
২৮। 'নিদ-সুপ্তি-মগন' শব্দের অর্থ
কী?
ক) রাতে জাগা
খ) স্বপ্ন দেখা
গ) গভীর ঘুমে
থাকা
ঘ) দুশ্চিন্তা করা
ব্যাখ্যা: 'সুপ্তি' অর্থ ঘুম, তাই
এর অর্থ গভীর ঘুমে থাকা।
২৯। হুমায়ুন সুস্থ
হওয়ার পর বাবরের কীসের
ইঙ্গিত পাওয়া গেল?
ক) দীর্ঘজীবনের
খ) সন্ন্যাস গ্রহণের
গ) মৃত্যুর
ঘ) সিংহাসন ত্যাগের
ব্যাখ্যা: যেহেতু বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে, তাই বাবরের মৃত্যুর
ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
৩০। 'জীবন বিনিময়'
কবিতার মূল উপজীব্য কী?
ক) রাজকীয় ক্ষমতা
খ) জীবনের অনিত্যতা
গ) নিঃস্বার্থ পিতৃস্নেহ
ঘ) চিকিৎসা বিজ্ঞানের
ব্যর্থতা
ব্যাখ্যা: কবিতাটির মূল আলোচ্য বিষয়
হলো নিঃস্বার্থ পিতৃস্নেহ ও আত্মত্যাগ।
৯ম-১০ম শ্রেনির প্রত্যুপকার গল্পের সৃজনশীল।। সৃজনশীল লেখার সহজ কৌশল! ১০০% নম্বর নিশ্চিত।।
